বাস-লঞ্চ-ট্রেন কিংবা বিমান, গন্তব্যে যেতে একই পথে কতো বিপরীত পছন্দ আমাদের। আবার চিন্তা থাকে পরিবহনটা ভালো কি মন্দ? বিপজ্জনক নাকি নিরাপদ? যাত্রা আরামদায়ক হবে নাকি বিরক্তিকর? যাত্রাপথে এর চেয়ে আরও ভালো কী আছে? খরচ বেশি হয়ে যাচ্ছে নাকি আরও বাড়ানো যাবে? যাত্রাপথ নিয়ে এমন কতো কতো সমীকরণ। কিন্তু এমনো জনপদ আছে, যেখানে যেতে কোনো বিপরীত যানবাহনের চিন্তা করা কল্পনা। একটি বাহনেই যাতায়াত, যোগাযোগ বা পণ্য পরিবহণ সব কিছু। কোনো নবদম্পতির সুখের যাত্রার পাশাপাশি একই বাহনে পাড়ি জমায় কোনো রোগী-লাশ। যাতায়াতের এই পথ যেন এক জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি।
দ্বীপজেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলাধীন ছোট্ট দ্বীপ ইউনিয়ন ঢালচরের কথা বলছি। চরফ্যাশনের ১৯ নং ঢালচর ইউনিয়নটি বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত। মূল ভূখণ্ড (দক্ষিণ আইচা, কচ্ছপিয়া) থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে এই দ্বীপের অবস্থান। দ্বীপের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, অপর তিন দিকে মেঘনা ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদী। এই জনপদের সঙ্গে মূল উপজেলায় যাতায়াতের পথ একটিই-জলপথ। কিন্তু এই জলপথের জলযাত্রা আর জলযানটি একটু আলাদা করে আলোচনার দাবি রাখে। আজ সেই জলযানটির কথা হোক।
কচ্ছপিয়া থেকে ঢালচর যেতে সময় লাগে প্রায় ৪ ঘণ্টা। এই দূরত্বে একমাত্র বাহন-এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট একটি ছোট্ট লঞ্চ। একতলা ছোট লঞ্চটিতে বেশ গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি করে দ্বীপবাসীর যাতায়াত। ঢালচর থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টায় কচ্ছপিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে লঞ্চটি। কচ্ছপিয়া ঘাটে পৌঁছায় দুপুর ১২টা নাগাদ। আবার কচ্ছপিয়া থেকে বিকাল ৩টায় ঐ লঞ্চটিই ছাড়ে ঢালচরের উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যা প্রায় ৭টা বাজে ঢালচরে পৌঁছাতে। এরপর রাতে লঞ্চটির বিশ্রাম। অর্থাৎ এই একটি লঞ্চই দিনে কেবল একবার ঢালচরবাসীকে নিয়ে যায় কচ্ছপিয়া, আবার দিনে একবারই ঢালচরে ফেরার সুযোগ থাকে।
ঢালচর থেকে কেউ চাইলেই যে কোনো সময় ভোলার মূল ভূখণ্ডে যেতে পারেন না। বলা চলে-তেমন সুযোগই নেই। আবার যারা বেলা ১২টায় কচ্ছপিয়া পৌঁছান, তারা কাজ সেরে ঐদিন দুপুর ৩টার মধ্যে ফিরতে পারেন না। ফলে ইচ্ছে না থাকলেও পরদিনের লঞ্চের অপেক্ষায় থাকতে হয়। এতে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন দ্বীপের রোগীরা।