সিলেট অফিস:
মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ থানায় কর্মরত এসআই জিয়াউল ইসলাম আর কত রকম অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিবেন কর্তৃপক্ষ। একাধিক নারীকে ধর্ষণ, বিয়ে, প্রতারণা, অর্থ আত্মসাত, ক্ষমতার অপব্যবহার এহেন কোন অপরাধ নেই যা তিনি করেনি। ডিআইজি অফিস থেকে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিলেও জেলার এসপি এ বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না বলে ভ‚ক্তভোগীর অভিযোগ। প্রশ্ন জাগে আর কত রকম অপরাধ করলে এসআই জিয়াউল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন কর্তৃপক্ষ। নাকি আইনের মারপ্যাচে জিয়াউল ইসলাম সকল অপরাধ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জিয়াউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি কামরুল ইসলাম। তিনি এখন সিলেট রেঞ্জ অফিসে কর্মরত রয়েছেন। এসআইর জিয়াউল ইসলাম (বিপি নং-৮১০১০৪৭৮৭২) এর বাড়ি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার মধুরাই (চকদৌলতপুর), পূর্ব গৌরীপুর ইউনিয়নে। পিতা জমসেদ আলী পূর্ব গৌরীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০০১ সালে কনেষ্টবল পদে পুলিশ বাহিনীতে যোগদেন। ২০১০ সালে এএসআই ও ২০১৬ সালে এসআই পদে পদ্দোনতি পান। চাকরি জীবনে লঘুদন্ড পেয়েছেন ১৫টি আর গুরুদন্ড পেয়েছেন ১টি। মৌলভীবাজার জেলা গুরুদন্ডের আদেশ নং-১১৫৪ তাং ২৯/০৫/২০২২ইং। তিনি এখন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থানায় কর্মরত আছেন। নিজের ঘরে রয়েছে স্ত্রী সেলি সহ দুটি সন্তান। কিন্তু পুলিশের চাকরির সুবাধে বিভিন্ন নারীর সাথে অবৈধ প্রেম, বিয়ে-প্রতারণা তার যেনো একটি নেশা। তবে তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি কঠিন কোন ব্যবস্থা। বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করা হলেও জিয়াউলের বিরুদ্ধে কোন রকম বিভাগীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন, জেলার এসপি। এসআই জিয়াউল ইসলামের বিরুদ্ধে এবার একাধিক মামলা ও অভিযোগ দায়ের করেছেন তার ২য় স্ত্রী দুই সন্তানের জননি মারুফা আক্তার শিপা। গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারী জিয়াউলের বিরুদ্ধে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি, মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার, ও পুলিশ হেডকোয়াটার্সে একাধিক অভিযোগ করেন মারুফা আক্তার শিপা। একটি অভিযোগ তদন্ত করেন সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের এএসপি কামরুল ইসলাম আইএন্ডসিএম (বিপি নং ৬৬৮৯১১৬২৬৬)। মারুফা আক্তার শিপা সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার আশিঘর গ্রামের মৃত জুনাব আলীর মেয়ে। তার ১ম বিয়ে হয়েছিলো রাজনগর উপজেলায়। সে ঘরে তার দুটি সন্তান রয়েছে।
শিপার করা অভিযোগ ও তদন্তকারী কর্মকর্তার দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদন ডিআইজি অফিস সূত্র স্বারক নং-৪৪,০১,৬০০০,০০৮,০১.০০১.২৪.১১৯৯০ মতে।
জানা যায়, বিগত ২০১৭ সালে একটি মামলার মাধ্যমে পরিচয় হয় মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানায় তৎকালীন সময়ে কর্মরত এসআই জিয়াউল ইসলাম ও মারুফা আক্তার শিপার। ২০১৭ সালে ১১ মে মামলা সংক্রান্ত কাজে থানায় রাজনগর থানায় গেলে জিয়াউল ইসলাম শিপাকে থানার পাশ্ববর্তী বাসার বাসিন্ধা নারী কনেস্টবল খাদিজা বেগমের বাসায় বসে কথা বলার জন্য ডেকে নিয়ে জুসের সাথে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে তা শিপাকে খাইয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক করেন এসআই জিয়াউল ইসলাম। সে সময় তিনি ধর্ষণের একাধিক ভিডিও চিত্র ধারন করে শিপাকে বø্যাক মেইল করেন জিয়াউল। তাতে সহযোগীতা করেন কনেষ্টবল খাদিজা ও তার স্বামী জসিম মিয়া। এ ঘটনার পর মারুফা আক্তার শিপা আত্মহত্যার চেষ্টা করলে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে নিজেকে বাঁচাতে চতুর জিয়াউল ইসলাম, স্থানীয় মেম্বার জিয়াউলের মামা আবুল হোসেন ও মৃত ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক মিয়া সহ পরিচিত কয়েকজনকে কনেষ্টবল খাদিজার বাসায় ডেকে নিয়ে ঐ দিন রাতেই শিপাকে ১২ লাখ টাকার দেনমোহর দিয়ে বিয়ে করেন তিনি, তারপর আগষ্ট মাসের ২৪ তারিখে রাজনগর উপজেলার ৫নং কাজির অফিসে নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এর মাধ্যমে বিয়ের কাবিননামা রেজিষ্ট্রার করেন। এ সময় জিয়াউল তার প্রথম স্ত্রীর কোন অনুমতি নেননি। রাজানগর উপজেলার এক কাজী নজরুল ইসলাম মাধ্যমে বিবাহ করে ঐ কাজির মাধ্যমেই একই বছরের ২৪ আগষ্ট বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রার করেন জিয়াউল। তখন দুই সন্তানের জননি মারুফা আক্তার শিপাকে তার প্রথম স্বামীকে তালাক প্রদান করতে বাধ্য করেন জিয়াউল। যা ছিলো ধর্ষণ থেকে রক্ষায় জিয়াউল ইসলামের একটি নাটক মাত্র। এদিকে জিয়াউল ইসলাম যে কাজী অফিসে নিয়ে শিপা ও তার বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রার করেছেন এবং শিপার ১ম স্বামীকে তালাকনামা পাঠিয়েছেন তা ভ‚য়া বলে দাবী করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম নিজেই। বিয়ের নাটকটি কাজে লাগিয়ে শিপার কাছ থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন এসআই জিয়াউল। পরে আরো টাকার জন্য অমানসিক নির্যাতন করে তার গর্ভের অনাগত ৩ মাসের সন্তান নষ্ট করেন জিয়াউল। চতুর জিয়াউল নিজের অপরাধ ডাকতে শিপার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও নিজের কবজায় নিয়ে নেন। যাতে সকল প্রমানাধি মেষ করতে পারেন সহজে। এরপর থেকে শিপাকে তার জীবন থেকে সরে যেতে নানা ভাবে নির্যাতন নিপীড়ন করে এসআই জিয়াউল। বাধ্য হয়ে এসব ঘটনায় বাদী হয়ে মৌলভীবাজার সিনিয়র জ্যুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এ একটি সিআর মামলা করেন ভুক্তভোগী মারুফা আক্তার শিপা। মামলা নং ২০৮/২০২৪ ইং। মামলায় তিনি তার সাথে ঘটে যাওয়ার সমূহ বিবরণ তুলে ধরেন এবং পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। আশ্চর্য জনক হলেও সত্য মারুফা আক্তার শিপার করা অভিযোগের বিষয় তদন্তকালে ধর্ষণ, বিয়ে, নির্যাতন, অর্থ আত্মসাতের সব রকম সত্যতা পান তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি কামরুল ইসলাম। আর আদালতের করা একই রকম মামলার কোন সত্যতা পান নি পিবিআইর আরেক তদন্তকারী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। তিনি নাকি দখরাস্তকারী শিপার পক্ষে রির্পোট দিতে নগদ এক লাখ ঘুষ টাকা দাবী করলে শিপা টাকা দিতে না পারায়। তার বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন সেই কর্মকর্তা। বাধ্য হয়ে মারুফা আক্তার শিপা আদালতে বিপিআইর তদন্ত করা মামলার রির্পোটের বিরুদ্ধে নারাজি দিলে তা এখন নতুন করে তদন্ত করছেন মৌলভীবাজার জেলার সিআইডি অফিসে কর্মরত পুলিশ পরির্দশক মো.নুনু মিয়া। অপরদিকে নিজেকে বাঁচাতে জিয়াউল ইসলাম সম্পন্ন মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মারুফা আক্তার শিপার বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার আদালতে একটি মনগড়া মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। যাহার মামলা নং সিআর ৪৩/২০২৫। উক্ত মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডিতে কর্মরত পুলিশ পরির্দশক সুদিপ্ত। উক্ত মামলা দায়ের করতে জিয়া উর্ধতন কর্মকর্তা কারোরই অনুমতি নেন নি বলে পুলিশ অফিস সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলার কথা গোপন রাখেন উর্ধতন অফিসারদের কাছে। এদিকে ডিআইজি অফিসে করা অভিযোগে তদন্তকালে জিয়াউল ইসলামের বিরুদ্ধে মারুফা আক্তার শিপার করা অভিযোগের সব রকম সত্যতা পাওয়ার পাশাপাশি জয়া নামের আরো এক নারিকে ধর্ষণ, নির্যাতন ও অর্থ আত্মসাতে প্রমাণপান তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে কর্মরত এএসপি কামরুল ইসলাম। দীর্ঘ তদন্তকালে তিনি মারুফা আক্তার শিপা এবং অভিযুক্ত এসআই জিয়াউল ইসলামের মোবাইল কথপোকথনের ৪৮টি কলরেকর্ড সংগ্রহ করেন। প্রায় ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এছাড়া ইতিপূর্বে এসআই জিয়াউল ইসলাম মৃত-কনস্টেবল তাহেরের স্ত্রী আছমা আক্তার জয়ার সাথে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে প্রেমের সম্পর্ক করে অন্ত:সম্পর্ক গড়ে বিবাহের কথা বলে একাধিকবার রিসোর্টে নিয়ে শারীরিক সম্পর্কসহ নানা ভাবে অত্যাচারসহ মৃত-স্বামী কনস্টেবল তাহেরের পেনশনের চারলক্ষ টাকা আত্মসাৎ করায় গুরুদন্ডে দন্ডিত হন। যার ফলে তার এক বছরের বেতন স্থগিত করা হয়। এই রির্পোটে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয় এসআই জিয়াউল ইসলাম অভ্যাসগত ভাবে কিংবা স্বভাবগতই দুশ্চরিত্রের অধিকারী যা নৈতিক স্খলন, বিভাগীয় নিয়ম-শৃংখলা পরিপন্তি তথা অসাদাচরনের সামিল। যার ধারা তিনি পিআরবির ১০০ ও ১০৯ ধারা ভঙ্গের অপরাধ করেছেন বলে প্রমানিত হয়। জিয়াউলের এসব কারণে, বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুন্ন করাসহ জনমনে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রশ্নের উদ্ভব ঘটিয়েছে। এমনকি, থানা পুলিশ তথা অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের কার্যক্রমকে বিচলিত করা সহ অপমানিত করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। উক্ত রিপোর্টে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু কে নিবে জিয়াউলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। এদিকে মারুফা আক্তার শিপা মামলা দায়েরের কারণে জিয়াউল তাকে নানা রকম হুমকি দিচ্ছে এবং আরো ৫ লাখ টাকা যৌতুক দিলে সে তাকে বউ হিসাবে মেনে নিবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। নতুবা মামলা করে কোন লাভ হবেনা বলেও হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এমন তাকে প্রাণে হত্যা করতে চায় বলে মামলায় উল্লেখ করেন মারুফা আক্তার শিপা। এসব ঘটনায় মারুফা আক্তার শিপা চলতি বছরে জিয়াউল ইসলামের বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার সিনিয়র জ্যুডিসিয়াল ১ম আদালতে আরেকটি মামলা করেন। যাহার নং ১৭৯/২০২৫। এছাড়া নিজের বরণ পোষণ না করায় তিনি পারিবারিক জজ আদালতে আরেকটি মামলা করেন যাহার নং ১৪/২০২৫ ইং। মামলা গুলো এখন তদন্তাধিন রয়েছেন, যার একটি মামলা তদন্ত করছেন মৌলভীবাজার অফিসের সমাজ সেবা কর্মকর্তা। এসব বিষদ বিবরণ জানিয়ে মারুফা আক্তার শিপা এসআই জিয়াউলের বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে গত ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ইং আরেকটি লিখিত অভিযোগ করেন সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে। জিয়াউলের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার পর কেন তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছেনা। জিয়াউলের ভয়ে তিনি এখন বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাহলে কি কাজি অফিসের বিয়ের নাটক সাজিয়ে জিয়াউল ইসলাম মারুফা আক্তার শিপাকে লাগাতার এতো দিন ধর্ষণ করেছেন। এর উত্তর কে দিবে? নাকি জিয়াউল ইসলাম এখনো আওয়ামীলীগের সভাপতি পিতা জমসেদের ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করেই চলছেন প্রশাসনে। মারুফা আক্তার শিপার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো.নুনু মিয়া জানান, মামলার বাদীর বক্তব্য, সাক্ষিদের সাক্ষ্য গ্রহণসহ সকল প্রমানাধি সংগ্রহ করে তদন্ত চলমান আছে। তদন্তে যা সঠিক পাওয়া যাবে তাই আদালতে দাখিল করা হবে। কেউ দূষ করলে সে শাস্তি পাবে। তিনি মামলার বাদীর সকল বক্তব্য শুনেছেন। সাক্ষিদের সাক্ষ্য নিচ্ছেন।
মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার এম.কে এইচ. জাহাঙ্গির হোসেন (পিপিএম সেবা) বলেন, কেউ অপরাধ করলে সে শাস্তি পাবে, কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা সে পুলিশ হউক আর যেই হউক। জিয়াউলের বিষয়টি তিনি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।